সিএমজেএফ-বিএমবিএ বৈঠক

শেয়ারবাজার গতিশীল করতে আইপিও বাড়াতে হবে

সময়: সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০ ৮:৩৮:১৭ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে গতিশীল করতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ায় কিছু সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে আইপিও বিদ্যমান সময় সীমাসহ দীর্ঘ সূত্রিতা কমানো, অডিট রিপোর্টে (নিরীক্ষা প্রতিবেদন) স্বচ্ছতা আনতে হবে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতাদের সঙ্গে শেয়ারবাজারের রিপোর্টারদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট’স ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে উঠে আসে।

বিএমবিএ’র কার্যালয়ে এ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল, বিএমবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক এয়ার কমোডর (অব.) আবু বকর, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহবুব হোসেন মজুমদার এবং মো. ওবায়েদুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশে সেকেন্ডারি মার্কেট বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাজার খারাপ হলেই আইপিওর বদনাম হয়। অনেকেই বলে ভালো কোম্পানি আসছে না বলে বাজার খারাপ হচ্ছে। একটি কোম্পানির সাবস্ক্রিপশনে যখন ২০-২৫ গুন আবেদন জমা হয়। তখন তাকে খারাপ বলা যায় না। তবুও ভাল কোম্পানি না এলে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাজারের গতি বাড়াতে আইপিও বাড়াতে হবে।
ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছে। অনেকের সঙ্গে আমরাও বলছি বাজারের নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য আইপিও পক্রিয়া দায়ী। কারণ আইপিওর বেড়াজাল থেকে আমরা বেড়োতে পারছি না। আগে একটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন থেকে ফি রাখা ছিল। এরপর প্রথম দিন থেকে এখন লক ইন পিরিয়ড করা হয়েছে। তাছাড়া কোম্পানির অডিট রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি স্বচ্ছ অডিট রিপোর্টই ভালো কোম্পানির আইপিও নিশ্চিত করতে পারে।

তিনি বলেন, বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। যেমন ২০১০ সালের পর বাজারে ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যে কারণে ১৫ হাজার কোটি টাকার নেগেটিভ ইক্যুইটি তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইপিওতে বার বার কোয়ালিটি সম্পন্ন কোম্পানির কথা আসছে। এই ধরনের কোম্পানির একটি সংজ্ঞা নির্ধারন করা দরকার। এর একটা চেক লিস্ট থাকা উচিত। এরমধ্যে যেসব বিষয় থাকবে তা নিশ্চিত করতে পারলে তাকে কোয়ালিটি সম্পন্ন কোম্পানি বলা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাজার এক ধরনের অবস্থার মধ্যদিয়ে চলেছে। তখন এতবেশি অস্থির ছিল না। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ সালে এসে বাজারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা ২০১০ সালেও ছিল না। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল ২ বছরে অনেকগুলো নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। একই সঙ্গে একটি কোম্পানির অবসায়ন প্রক্রিয়ার খবর। এছাড়াও গ্রামীণফোনের সঙ্গে জটিলতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারমতে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ১ টাকা কমলে সূচক আড়াই থেকে ৩ পয়েন্ট কমে। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার থেকে ১২শ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এসব কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
হাসান ইমাম রুবেল বলেন, বাজারে ভাল আইপিও আনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা রয়েছে। তাদেরকে সঠিকভাবে এই দায়িত্ব পালন করা উচিত। তারমতে, দেশের নীতি নির্ধারকদের শেয়ারবাজার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা রয়েছে। কারণ তারা বাজার বলতে সেকেন্ডারি মার্কেট বুঝে। এমনকি অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও কেউ কেউ আইপিও বন্ধ করে দিতে বলেছে।
রিয়াদ মতিন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে কোম্পানিতে স্বচ্ছতা এসেছে। ১৯৯৬ সালের পর কোনো একটি কোম্পানি হলেই তালিকাভুক্তি সম্ভব ছিল। ২০০০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল। এরপর পরিবর্তন আসে। বর্তমানে আইপিওর ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা এসেছে। অনেকগুলো দিক পরিপূর্ণ করতে হয়। এরপরও আমরা সব ভাল কোম্পানি আনতে পেরেছি, এমনটা বলা যাবে না।
তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্পোরেট অ্যাডভাইজারিও করতে হয়। এছাড়াও কোম্পানির অডিট রিপোর্টের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিলকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিও মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। কারণ বর্তমানে কোনো কোনো আইপিওতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়। এতে সামগ্রিকভাবেই সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানির বোর্ডে বিভিন্ন গ্রুপের আধিপত্য থাকে। পরিচালক হওয়ার জন্য নির্ধারিত শেয়ার ধারণ করা পরও বাহির থেকে কোনো শেয়ারহোল্ডারদের পরিচালনা পর্ষদে ঢুকতে দেয়া হয় না।
মাহবুব মজুমদার বলেন, সুশাসনে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। কারণ ভারতে ২২টি স্টক এক্সচেঞ্জ। সেখানে কোনো কোম্পানি তিন বছর লভ্যাংশ না দিলে, ওই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুৎ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এই নিয়ম নেই। তিনি আরও বলেন, দেশে আইপিও প্রক্রিয়া অনেক জটিল। প্রতিটি আইপিওর ক্ষেত্রে ২৯৬টি তথ্য দিতে হয়। তারমতে, কিছু গ্রুপ রয়েছে, যাদের অন্যান্য কোম্পানি ভাল, কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি খারাপ। এটি যৌক্তিক নয়। এ সময়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বাজারের উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, সহ-সভাপতি এমএম মাসুদ, অর্থ সম্পাদক আবু আলী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুজয় মহাজন, মাহফুজুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন অভি, নিয়াজ মাহমুদ এবং নাজমুল ইসলাম ফারুক।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৯৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged