bangladesh bank

ঋণের সুদ ও স্প্রেড বেড়েই চলেছে

সময়: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২২, ২০১৯ ৫:৩৯:৫১ পূর্বাহ্ণ


তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বরং ব্যাংক ঋণের সুদের হার আরও বাড়ছে। এদিকে ঋণের সুদের হার বাড়লেও কমেছে আমানতের সুদের হার। এর ফলে বাড়ছে আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য (স্প্রেড)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে শিল্প ঋণে গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। অথচ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে শিল্প ঋণে গড় সুদহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে। অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়ার পর সুদহার কামানোর পরিবর্তে উল্টো দশমিক ২১ শতাংশ (ভারীত গড়ে) বাড়িয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বাস্তবে এই সুদহার আরও বাড়িয়েছে এসব ব্যাংক। কারণ গত বছরের জুলাই থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো শিল্প ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এদিকে মাসিক হিসেবেও সুদহার বেড়েই চলেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চে বৃহৎ শিল্প ঋণে গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত মে মাসে সেটা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জুনে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়িত না হওয়াটা ‘সরকার ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এতগুলো সুবিধা আদায় করে নিল, অথচ সুদহার কামনোর পরিবর্তে বাড়ালো, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।’
অবশ্য সম্প্রতি এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি কিছুদিন আগে সবগুলো ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বসে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছিলেন, ‘সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন না হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ যারা ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে পারে তারা বাতিলও করতে পারে।’ ওইদিন তিনি জানিয়েছিলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন আইনি কাঠামোর মধ্যেই সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে ব্যাংকগুলো। নির্দেশনা না মানলে তখন তারা শাস্তির আওতায় আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে খবর নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নের নির্দেশনা সম্বলিত সার্কুলার তৈরি করার জন্য কাজ করছে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ। আগামী মাসের মধ্যেই সার্কুলারটি জারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে সুদহার বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে সার্বিক স্প্রেডও। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো আমানতে সুদহার কমালেও ঋণে সুদহার বাড়িয়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সার্বিক ব্যাংক খাতের স্প্রেড বেড়েছে দশমিক ১০ শতাংশ। মে মাসে ৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ স্প্রেডের বিপরীতে জুন মাসে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশে। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও সুদের হারের (ভারীত গড়ে) পার্থক্য বেড়েছে দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি বছরের জুন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্প্রেড হয়েছে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মে মাসে যা ছিল ২ দশমিক ২৭ শতাংশ।
জুন মাসে মে মাসের তুলনায় আমানতে সুদের হার (ভারীত গড় হিসাবে) কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। জুন মাসে পূর্বের মাসের তুলনায় আমানতে সুদ হার কমেছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
অন্যদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে বড় আকারে। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতে সুদহার বাড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর্থিক খাতে নগদ অংকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় আমানত আকৃষ্ট করতে সুদহার বাড়িয়ে চলেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। জানা গেছে, পিপলস লিজিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থার সংকট তৈরি হওয়াও আমানতের সুদ হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫০৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged