বিএসইসির শোকজের কবলে ডিএসই

সময়: বুধবার, নভেম্বর ৯, ২০২২ ১০:১৯:২২ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : পদন্নোতি পাওয়া কর্মকর্তাদের নাম বাতিল করায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) শোকজ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, ডিএসই কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে একযোগে ৯৫ জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া। এর জের ধরে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এবার তার দেওয়া পদোন্নতির তালিকা থেকে ১৮ কর্মকর্তার নাম বাতিল করেছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, যা গত রোববার (৬ অক্টোবর) কার্যকর হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডিএসইর মানবসম্পদ নীতি (এইচআর পলিসি) সংক্রান্ত সভা ডেকেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভার বিষয়ে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় কমিশন প্রাঙ্গণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩ এর রেগুলেশন ৬.৬ অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা নীতিমালা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।

এছাড়া, রেগুলেশন ৮.৯ অনুযায়ী, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে, এমডির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বা ডিএসইর জন্য ক্ষতিকর হলে পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করারও সুযোগ আছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।

ডিএসইর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়ার প্রতি আক্রোশ থেকেই এই পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে যাদের কাজে আস্থা রাখতেন বেছে বেছে তাদের পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় ১৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত রোববার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য ৮ কর্মকর্তাকে ‘ডাবল প্রমোশন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
যাদের পদোন্নতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে: উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) থেকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হওয়া তিনজন।

জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (এসএম) থেকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হওয়া সাতজন। ব্যবস্থাপক থেকে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হওয়া পাঁচজন। জ্যেষ্ঠ এক্সিকিউটিভ থেকে উপ-ব্যবস্থাপক হওয়া তিনজন।

মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন- মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাইদ মাহমুদ যোবায়ের ও সৈয়দ আল-আমিন রহমান।

সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন- মো. বজলুর রহমান, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ পাঠান, মোহাম্মদ আহসান হাবিব, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন রেজা।

জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন- ফারহানা শরিফা, সাদাত মারুফ হাসনায়েন, মামুন-উর-রশিদ, শরিফ গিয়াস উদ্দিন আলম ও মো. মশিউর রহমান চৌধুরী।

উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা করা কর্মকর্তারা হলেন- মো. আব্দুল লতিফ মিয়া, মো. সফিকুল আলম ও মো. দেলোয়ার হোসেন।

নীতিমালায় কী আছে?
২০১৩ সালে বিএসইসির অনুমোদিত গেজেটের ডিএসইর বোর্ড ও প্রশাসনিক বিধি-নিয়মের ৬.৬ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা নীতিমালা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।

বিধিমালার ৮.৯ ধারায় বলা আছে, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

এমডির কোনো সিদ্ধান্তে কিছু ভুল বা ডিএসইর ক্ষতি হতে পারে এমন মনে হলে পরিচালনা পর্ষদ তা বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অথবা অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করার সুযোগ রয়েছে।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ এই বিষয়ে বলেন, ‘আইনে যেখানে বলা আছে এমডির কোনো সিদ্ধান্ত চাইলেই বোর্ড বা ম্যানেজমেন্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সেখানে কোনো প্রকার তদন্ত করা ছাড়া এভাবে এতগুলো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার পর, তা কেড়ে নেয়া ঠিক হয়নি।’

এই বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘আগে যে এমডি ছিলেন তিনি যাওয়ার আগে একটি পদোন্নতি দিয়ে গেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এটিকে রিভিউ করে বর্তমান ম্যানেজমেন্ট যাদের উপযুক্ত মনে করেছে তাদের প্রমোশন দিয়েছে, যাদের মনে করেনি তাদের পদোন্নতি বাতিল করেছে। এখানে আমার কোনো মতামত নেই। পদোন্নতির বিষয়টি ম্যানেজমেন্টের।’

বোর্ড কি এমডির নেয়া সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে বোর্ড একা সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখানে ম্যানেজমেন্ট আছে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সব হয়েছে। বোর্ডের এখানে কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’

 

 

Share
নিউজটি ২৩২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged