সাক্ষাৎকারে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান

দাবি পরিশোধসহ সব সূচকেই প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে জেনিথ ইসলামি লাইফ

সময়: মঙ্গলবার, জুলাই ৩০, ২০২৪ ১১:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ


ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ভবিষ্যতেও সূচকের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস
এম নুরুজ্জামান। সম্প্রতি কোম্পানিটির সার্বিক কর্মকাণ্ড, বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে শেয়ারবাজার
প্রতিদিনকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। গ্রাহকদের আস্থা নিয়েই
আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কাছে আমাদের ফাইল সাবমিট করা হয়েছে। কোম্পানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকায় আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই আইপিও’র অনুমোদন পাবো।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) অনুমোদন নিয়ে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট যাত্রা শুরু করে দেশের বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এরইমধ্যে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে বেশ সফলতা দেখিয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের এ বীমা কোম্পানি। এস এম নুরুজ্জামান জানান, চলতি বছরের প্রথমার্ধে জেনিথ ইসলামী লাইফের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ৩৮.৪৭ শতাংশ।

একইসঙ্গে কোম্পানিটির বিনিয়োগ এবং দাবি পরিশোধের হারও বেড়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি সর্বমোট ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। ২০২৩ সালের একইসময়ে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা বা ৩৮.৪৭ শতাংশ বেড়েছে।

২০২৪ সালে বীমা কোম্পানিটির সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৪৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ
টাকা। এ ছাড়াও নবায়ন সংগ্রহ ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং গ্রুপ বীমার প্রিমিয়াম ৬ শতাংশ বেড়ে ৯০ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে।
জেনিথ ইসলামী লাইফের বিনিয়োগও বেড়েছে ২৭.১৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাসে কোম্পানিটি ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা নতুন
বিনিয়োগ করেছে। এর আগে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির এই নতুন বিনিয়োগ ছিল ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

একইভাবে বীমা দাবি পরিশোধেও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে জেনিথ ইসলামি লাইফ। ২০২৩ সালের প্রথম অর্ধবার্ষিকের চেয়ে ২০২৪ সালের
প্রথম অর্ধবার্ষিক তথা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বা ১৮.৮৮ শতাংশ বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।
আপনার দৃষ্টিতে বীমা কি এবং গ্রাহকদের কেন বীমা করা উচিৎ বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে জেনিথ ইসলামি লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, প্রথমত, বীমা হচ্ছে এক ধরনের বাধ্যতামূলক সঞ্চয়। আপনি ব্যাংকে সঞ্চয় করলে যে কোনো সময় তুলে নিতে পারেন। কিন্তু বীমাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবশ্যই সঞ্চয় করতে হবে। এরপর তুলতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, এটি আর্থিক নিরাপত্তা।
তৃতীয়ত, অর্থ সাশ্রয়ীও বলা যায়। যেমন, বীমা গ্রাহকদের সরকার প্রিমিয়ামের উপর নির্দিষ্ট হারে আয়কর রেয়াত দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা কতটা-জানতে চাইলে এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের বীমাখাত ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বর্তমান সরকার বীমাখাতের উন্নয়নে অনেক কিছু করেছে। পহেলা মার্চকে বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে সারাদেশে বীমা নিয়ে ব্যাপক ইতিবাচক
প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে। এতে বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দূর হচ্ছে। জনগণ বীমাকে আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে মনে করা শুরু করেছে। তারা বীমার দিকে ঝুঁকছে। বীমা পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি বিশাল অর্জন। অতীতে শিক্ষিত লোকেরা খুব বেশি বীমা পেশায় আসত না। এখন শিক্ষিত লোকেরা এ পেশায় আসছেন। এ সবই সম্ভাবনা।

বীমা খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ইমেজ সংকট। বীমা শিল্পে এই ইমেজ সংকট কাটিয়ে ওঠা এবং আস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনার
কোম্পানি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমাকে অনেক সময় মানুষ এমএলএম, হায় হায় কোম্পানি মনে করে। শিক্ষিতদেরও বীমা সম্পর্কে ধারণা সঠিক নয়। এজন্য সব পক্ষই কমবেশি দায়ী। গণমাধ্যমেও এসব খাত নিয়ে নেতিবাচক খবরগুলো যেভাবে প্রচার হয় ইতিবাচক বিষয়গুলো ততটা প্রচার হয় না। কোনো একটি কোম্পানির কোনো একজন কর্মকর্তা দুর্নীতি কিংবা অর্থ আত্মসাত করলে এর দোষ গোটা ইন্ডাস্ট্রির উপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ না। আইডিআরএ এখন অনেক শক্তিশালী। বীমাখাতে আস্থা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইডিআরএ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে জনগণের আস্থা বাড়ছে। বীমা সম্পর্কে আমরা সচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি নিয়েছি।

যথাসময়ে গ্রাহকের ক্লেইম, এসবি, ম্যাচুরিটি, সারেন্ডারের টাকা পরিশোধ করছি। এতে মানুষ মনে করছে বীমা কোম্পানি শুধু টাকা নিচ্ছে না দিচ্ছেও। আমরা বীমা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট কিছু ভিডিও তৈরি করেছি। বীমা কী এবং কেন সেসব জানানোর চেষ্টা করছি। যাতে ইমেজ সংকট কাটিয়ে বীমাখাত গ্রাহকের আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

বীমা খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সঠিক সময়ে ও ঠিকমত গ্রাহককে বীমা দাবি পরিশোধ না করা-মন্তব্য করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের এই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, যার ফলে এ খাতে ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। বীমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না।
ম্যাচুরিটি হয়ে গেলেই গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করতে কোম্পানিগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। অনেক কোম্পানিই এক্ষেত্রে দেরি করছে। ফলে গ্রাহকরা হতাশ হচ্ছেন।

গ্রাহকদের জন্য জেনিথ লাইফের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কতটা শক্তিশালী- জানতে চাইলে এস এম নুরুজ্জামান বলেন, গ্রাহকদের সেবাপ্রাপ্তির
প্রক্রিয়াকে সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে বাংলা ভাষায় আমাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস রয়েছে। গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও জেনিথের প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন। ব্যাংকের সাথেও আমাদের চুক্তি রয়েছে। প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সাথে সাথে একজন গ্রাহক মোবাইল এসএমএস, অ্যাপস অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হিসাব সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারছেন।

আমাদের সকল কর্মী এবং কর্মকর্তারাও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্স, র‌্যাংকিং, আর্নিং, বিজনেস স্ট্যাটাসসহ সকল আপডেট তথ্য দেখতে পারছেন। কর্মীদের পদোন্নতিসহ ব্যবসায়িক সকল প্রণোদনামূলক অর্জন কোম্পানির স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে।

Share
নিউজটি ১৬৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged