খবরটি নি:সন্দেহে উদ্দীপনামূলক। আামাদের জন্য নিশ্চয়ই এটি স্বস্তিদায়কও বটে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের অর্থনীতিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫দশমিক ৫৭ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে খাদ্য এবং খাদ্য বহির্ভুত উভয় খাতের মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য পণ্য মূল্রস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪দশমি ক ৯৭ শতাংশ,যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভুত মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ৬দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে কারোনা ভাইরাসের কারণে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি আবারো ঊর্ধ্বমুখি হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হ্রাস পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অবস্থায় কোনো কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আগামীতে পেঁয়াজের মূল্য কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্যের যোগান বৃদ্ধি পাবার কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ মূলত একটি আমদানি নির্ভর দেশ। বেশির ভাগ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করার ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগামীতে কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসের সময় দেশের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে এবার সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি তেমন একটা ঘটবে বলে মনে হয় না।
মূল্যস্ফীতি সব সময় খারাপ নয়। বাংলাদেশের মতো একটি অর্থনীতির জন্য কত শতাংশ মূল্যস্ফীতি সহনীয় বলে মনে করা যেতে পারে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য ৪ হতে সাড়ে ৪শতাংশ মূল্যস্ফীতি সহনীয় বলে মনে করা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি হচ্ছে মানব দেহের ব্লাড প্রেসারের মতো। ব্লাড প্রেসার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে তা মানুষের জীবনহানির কারণ হতে পারে। আবার কোনো কারণে ব্লাড প্রেসার অতিমাত্রায় কমে গেলে যেমন তা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ব্লাড প্রেসারকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমিত রাখতে হয়। মূল্য স্ফীতিও ঠিক তাই। কোনো কারণে মূল্যস্ফীতি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে তা সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে গণদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আবার মূল্যস্ফীতি যদি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় তাহলে দেশের উৎপাদক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই মূল্যস্ফীতিকে এমন অবস্থায় রাখতে হবে যাতে তা সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয় হয় আবার উৎপাদক শ্রেণিও তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পেতে পারে। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে রয়েছে তাকে আরো কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে এবং সেই অবস্থাকে স্থিতিশীল করতে পারলেই সবার জন্য উপকার হবে। বিষয়টি আমাদের মনে রেখে সেভাবেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে
সময়: মঙ্গলবার, মার্চ ১০, ২০২০ ১২:৫৩:১৮ পূর্বাহ্ণ