নাজুক অবস্থায় ব্যাংকিং খাত: ইয়োলো জোনে শেয়ারবাজারের ২৪ ব্যাংক

সময়: বুধবার, মার্চ ১৩, ২০২৪ ১২:০৪:১৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : নাজুক অবস্থায় রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যার মধ্যে শেয়ারবাজারের ২৬টি ব্যাংকের অবস্থা খুবই করুন। এর মধ্যে ২টি ব্যাংক রেড এবং ২৪টি ইয়েলো জোনে রয়েছে।

অনিয়ম, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বহীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতায় দেশের ব্যাংকগুলোর এই নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দেশে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ; এছাড়া ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অপর ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে।

সব মিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্য ভালো আছে ১৬টি ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

স্বাস্থ্য সূচক হিসেবে তৈরি করা ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, যার ৯টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিদেশি ও ৮টি দেশি ব্যাংক রয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে প্রেস বিফ্রিং করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

দুর্বল ও সবল ব্যাংকের গোপন এই প্রতিবেদন অভ্যন্তরীণ গবেষণার জন্য করা হয়েছে দাবি করে মুখপাত্র বলেন, কয়েকটি গণমাধ্যমে দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন নয়। একটি বিভাগ তাদের নিজস্ব কিছু তথ্য গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে এসেসমেন্ট করে। রেগুলার ফাইনেন্সিয়াল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেলথ ইনডিকেটর নয়। তাই এটি দিয়ে কোনো ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় বা তুলনা করা ঠিক হবে না।

মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এখানে চারটি ক্যাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স সিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫ এর মে মাস থেকে।

দুর্বল ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনো কোন দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে মার্জার না হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্জার করে দেবে।

বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। তবে ওই প্রতিবেদনে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এই ৫৪টি ব্যাংকের ছয়টি ষাণ্মাসিক তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য ছয়টি ষাণ্মাসিকে এই ৫৪ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮টির অবস্থার অবনতি হয়েছে। আর ১৬টির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাকি ৭টির মধ্যে তিনটির আর্থিক অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুলাই আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন।

ওই বছরের ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু গত দেড় বছরে এ ১০টি ব্যাংকের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাংকের অধিকাংশের অবস্থানই রেড জোনে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভালো অবস্থায় রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক এবং সীমান্ত ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে- জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংক।

৩টি ইয়েলো জোনে থাকলেও রেড জোনের কাছাকাছি থাকা ব্যাংকগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), সোনালী ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে থাকা ২৯টির মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো হলো- আইএফআইসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। অন্য ব্যাংক ২টি হলো- মেঘনা ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক।

 

Share
নিউজটি ৭০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged