editorial

মুদ্রা কারসাজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুশিয়ারি

সময়: শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০ ১২:০৩:১৪ পূর্বাহ্ণ


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাজারে তার নিজস্ব মুদ্রা ডলারের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে যে সব দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে সেই সব দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামীতে যে সব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে রাখবে তারে বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে ভর্তুকি বিরোধি শুল্কারোপের ব্যবস্থা গ্রহণ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দি চীনের বিরুদ্ধেই যে এই অস্ত্র কাজে লাগানো হবে তা বলাই বাহুল্য। উল্লেখ্য,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই চীনের বিরুদ্ধে এ মর্মে অভিযোগ করে আসছিল যে, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তার পণ্য সহজে বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে নিজ মুদ্রা ইয়েনের অবমূল্যায়ন করে রাখছে। চীন এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তার পেছনে অন্যান্য কারণ থাকলেও চীনের অভ্যন্তরীণ মুদ্রার অবমূল্যায়নের ইস্যুটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখ, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসৃত হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে রাষ্ট্র বা সরকার কখনোই তার স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় না। বাজার চাহিদা এবং যোগানের উপর ভিত্তি করেই মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। এতে একটি দেশের মুদ্রার প্রকৃত শক্তি নিরূপিত হয়। প্রত্যেক দেশই চায় তার স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী অবস্থানে থাকুক। কিন্তু তারপরও রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে কোনো কোনো দেশ ইচ্ছে করেই তার নিজস্ব মুদ্রার মান কমিয়ে রাখে। যে অভিযোগ উঠেছে চীনের বিরুদ্ধে। চীন নিজস্ব মুদ্রার বিনিময় হার কমিয়ে রাখা বা অবমূল্যায়নের মাধ্যমে স্থানীয় রপ্তানিকারকদের এক ধরনের অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে। চীনের মুদ্রার মান ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে রাখার মাধ্যমে দেশটির রপ্তানিকারকগণ কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে। কারণ কোনো দেশের স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার যদি কমিয়ে রাখা হয় তাহলে দেশটির রপ্তানিকারকগণ উপকৃত হন। কারণ তারা আগের মতো একই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও স্থানীয় মুদ্রায় আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন। অথচ এ জন্য রপ্তানিকারকের উৎপাদন ব্যয় বা অন্য কোনো খরচ বৃদ্ধি পাবে না। যদিও এতে আমদানি ব্যয় কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু যে সব দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানির উপর বেশি নির্ভরশীল তারা স্থানীয় মুদ্রা মান কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে চীন তার স্থানীয় মুদ্রার মান কমিয়ে রাখার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তারা এক ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। যা স্বাভাবিক অবস্থায় কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যি সত্যি স্থানীয় মুদ্রার মান কমিয়ে রাখা দেশগুলোর উপর কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের উদ্যোগ বা আচরণ নিশ্চিতভাবেই দেশ দু’টির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটাবে,যা বিশ্ব অর্থনীতিকে আরো বিপর্যায়ের মুখোমুখি করে তুলতে পারে। তাই যে কোনো সিদ্ধান্তই নেয়া হোক না কেনো তা ভেবে চিটন্তে নিতে হবে।

 

Share
নিউজটি ৩১৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged