ইউএমপি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আইডিআরএ ও বিআইএ

মূল্য পরিশোধ নিয়ে দ্বিধায় বীমা কোম্পানিগুলো

সময়: বুধবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২০ ১২:০৯:০২ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্মের (ইউএমপি) রেট পুনঃবিবেচনার বিষয়ে গত বেশ কয়েকদিন ধরে মোবাইল ফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টার পরও বীমা কোম্পানিগুলোর মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) কোন প্রতিনিধি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ অবস্থায় গতকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যদি আলোচনা করা না হয় তা হলে আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। বিষয়টি জানিয়ে ১৩ জানুয়ারি সোমবার বিআইএ-কে একটি চিঠি দেয় ইন্স্যুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)।

তবে আইডিআরএ’র বক্তব্য অস্বীকার করছে বিআইএ। সংগঠনটির প্রসিডেন্ট শেখ কবীর হোসেন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, আলোচনায় বসার জন্য আমরা কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। আমরা নিয়ন্ত্রণ কর্র্তপক্ষের কার্যালয়ে গিয়েও কথা বলে এসেছি। কিন্তু আইডিআরএ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে রেট পুনঃবিবেচনার কোন উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের সঙ্গে কোন মাধ্যমেই তারা যোগাযোগ করেনি। সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি বিকেলে একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্তু ইউএমপি রেট পরিশোধ নিয়ে আইডিআরএ’র সঙ্গে বসার আগে আগামীকাল (আজ) সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। এরপর আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সঙ্গে বিআইএ প্রতিনিধিরা রেট পুনঃবিবেচনার জন্য সঙ্গে বসবে। গতকাল একটি চিঠির মাধ্যমে আমরা বিষয়টি আইডিআরএ-কে জানিয়েছি।

এ বিষযে যোগাযোগ করা হলে কোন মন্তব্য করতে চাননি আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস। তবে দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ইউএমপি পদ্ধতিকে শুধু এসএমএস প্রেরণের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা প্রকৃত তথ্য নয়। এটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ, রিপোসিটরিসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ফিচার সম্বলিত একটি পদ্ধতি। সবার ভালোর জন্যই এটা করা হচ্ছে।

আইডিআরএ এবং বিআইএ’র এ মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ইউএমপি রেট পরিশোধ নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে বীমা কোম্পানিগুলো। গত ৫ জানুয়ারি ইউএমপি বাবদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পাঁচ টাকা সাত কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশনা দিয়ে দেশের সব বীমা কোম্পানিকে চিঠি দেয় আইডিআরএ। এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি কোন রকম আলোচনা ছাড়া ইউএমপি সার্ভিসের খরচ প্রদানের নির্দেশনা আপাতত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেয় বিআইএ। ১২ জানুয়ারি ররিবার বিআইএ’র পক্ষ থেকে একই চিঠি পাঠানো হয় দেশের সব বীমা কোম্পানিকে।

শুরু থেকেই ইউএমপি বাবদ খরচের বিরোধিতা করে আসছে বীমা কোম্পানিগুলো। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ পদক্ষেপের কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছে বিআইএ। সংগঠনটি বলছে, ইউএমপি বাবদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পলিসি প্রতি ৫ টাকার পরিবর্তে ৩ টাকা করা উচিত। এতে কারো কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এই রেট কমানো না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বীমা খাতের ওপর।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর ইউএমপি রেট পুনঃনির্ধারনের বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় বিআইএ। পরবর্তীতে গত ৪ ডিসেম্বর আবারো চিঠি দেয়া হয় বিআইএ’র পক্ষ থেকে। তবে এসব চিঠির কোনটিই আমলে নেয়নি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জীবন বীমা খাতে মোট পলিসি সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। আর এ পলিসি প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫ টাকা পরিশোধ করা হলে শুধু জীবন বীমা কোম্পানিগুলো থেকেই বছরে ২০ কোটি টাকা পাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে এ টাকার একটি অংশ দিতে হবে ইউএমপি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিওইআর সার্ভিস লিমিটেডকে।

উন্নত গ্রাহকসেবা, ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনায়ন, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য গত বছর ২৮ জানুয়ারি ইউএমপি বাস্তবায়নে বীমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, প্রতিটি বীমা কোম্পানির সকল পলিসি ও পলিসিহোল্ডার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ইউএমপি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ডিওইআর সার্ভিস লিমিটেডকে সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম সংগ্রহের সকল তথ্য ইউএমপি পোর্টালে আপলোড করার নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এর আগে ইউএমপি প্রশিক্ষণে না আসার কারণে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আইডিআরএ। গত বছরের মার্চ ও আগস্টে ইউএমপি নিয়ে দু’ দফা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রশিক্ষণে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠানই অংশগ্রহণ করে। সম্প্রতি ইউএমপি সংক্রান্ত তথ্যও কোম্পানিগুলোর কাছে চেয়েছে আইডিআরএ। তবে ডেল্টা লাইফসহ বেশ কিছু কোম্পানি কোন জবাব দেয়নি। এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৪২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged